ঢাকা ০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ মে ২০২৪, ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনাকালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা সম্পর্কে জরুরি ভাবনা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১০:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ অক্টোবর ২০২০
  • ১৪৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশে করোনা মহামারীর প্রভাব শুরু হয় গত মার্চ মাসে। এর ফলে অন্যান্য সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা খাতে নেমে আসে সম্পূর্ণ স্থবিরতা। পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে বর্তমান ডিজিটাল প্রযুক্তির কারণে এই স্থবিরতা কিছুটা কাটতে শুরু করে। ভার্চুয়াল শিক্ষাব্যবস্থা, অনলাইন ক্লাস ইত্যাদির দ্বারা ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হলেও কিছুটা ব্যবধান রয়ে যাচ্ছে।

প্রতিবছর দেশে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা পাসের পর লক্ষাধিক শিক্ষার্থী স্নাতক পর্যায়ের বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে থাকে, যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাশাস্ত্রে অধ্যয়ন করে থাকে। এ বছর করোনার কারণে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা অদ্যাবধি স্থগিত থাকায় বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রী পরবর্তী ধাপে যেতে পারছে না এবং স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা একটি মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছে।

বিশেষ করে এই সেশনে মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অধ্যয়ন বন্ধ হয়ে যাবে, যা বিগত বছরগুলোয় দেখা যায়নি। প্রাসঙ্গিকভাবেই একজন চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে কিছু উৎকণ্ঠা ও চিন্তাভাবনা আমার মধ্যে অনুভূত হচ্ছে, যা পাঠকদের জন্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

বাংলাদেশে প্রতিবছর সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোয় প্রায় ৯ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হয়, যারা পাঁচ বছরে অধ্যয়ন শেষ করে এবং ইন্টার্নশিপের পর এদের মধ্যে কমপক্ষে ৪-৫ হাজার ডাক্তার দেশের চিকিৎসাসেবার মূলধারায় যুক্ত হয়।

এ বছর যদি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা না হয় কিংবা শিক্ষার্থীরা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে না পারে, তবে চিকিৎসা খাতে বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি হবে, যা পরবর্তী সময়ে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার আয়োজন বা বিকল্প ব্যবস্থায় আয়োজনের ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানাই।

আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই: বিগত ১৫-২০ বছরে বাংলাদেশের চিকিৎসা শিক্ষা বিদেশে বেশ সুনাম অর্জন করেছে। প্রতিবছর পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে প্রচুর ছাত্রছাত্রী বাংলাদেশে পড়তে আসে। এটা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। এতে একদিকে যেমন বিদেশি মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে, অন্যদিকে এসব ছাত্রছাত্রী নিজ দেশে কিংবা বিদেশে গিয়ে সুনামের সঙ্গে কাজ করছে, যার দ্বারা বাংলাদেশের চিকিৎসা শিক্ষার মান সম্পর্কেও সবাই অবহিত হচ্ছে।

যদি এ বছর কোনো কারণে বিদেশি ছাত্রছাত্রী ভর্তি বিঘ্নিত হয়, তাহলে এ খাতটি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা অন্য দেশে ভর্তির চেষ্টা করবে, যা কোনোভাবেই আমাদের কাম্য নয়।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমাদের ভবিষ্য করণীয় সম্পর্কে ভাবতে হবে এবং দ্রুত পরিকল্পনা করতে হবে। যদি আমরা এবারে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা না নিয়ে পরবর্তী ব্যাচ কিংবা বছরের সঙ্গে নেয়ার চিন্তা করি, তবে সেটাও হবে আরেকটি বিপর্যয়। কারণ, দুই ব্যাচের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে এক সেশনে ভর্তি করা বা জায়গা দেয়া সম্ভব হবে না এবং অনেকেই ভর্তি হতে পারবে না।

অতএব আমাদের চিন্তা করতে হবে-কীভাবে ২০২০ সালের মধ্যেই দ্রুত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা সম্পন্ন করে পরবর্তী স্নাতক পর্যায়ে (বিশ্ববিদ্যালয়/মেডিকেল/ইঞ্জিনিয়ারিং) ভর্তির ব্যবস্থা করা যায়। সেইসঙ্গে বিদেশি ছাত্রছাত্রীরাও যাতে প্রতিবছরের মতো মেডিকেল কলেজগুলোয় ভর্তি হতে পারে, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

করোনাকালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা সম্পর্কে জরুরি ভাবনা

আপডেট টাইম : ১০:১০:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ অক্টোবর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশে করোনা মহামারীর প্রভাব শুরু হয় গত মার্চ মাসে। এর ফলে অন্যান্য সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা খাতে নেমে আসে সম্পূর্ণ স্থবিরতা। পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে বর্তমান ডিজিটাল প্রযুক্তির কারণে এই স্থবিরতা কিছুটা কাটতে শুরু করে। ভার্চুয়াল শিক্ষাব্যবস্থা, অনলাইন ক্লাস ইত্যাদির দ্বারা ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হলেও কিছুটা ব্যবধান রয়ে যাচ্ছে।

প্রতিবছর দেশে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা পাসের পর লক্ষাধিক শিক্ষার্থী স্নাতক পর্যায়ের বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে থাকে, যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাশাস্ত্রে অধ্যয়ন করে থাকে। এ বছর করোনার কারণে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা অদ্যাবধি স্থগিত থাকায় বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রী পরবর্তী ধাপে যেতে পারছে না এবং স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা একটি মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছে।

বিশেষ করে এই সেশনে মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অধ্যয়ন বন্ধ হয়ে যাবে, যা বিগত বছরগুলোয় দেখা যায়নি। প্রাসঙ্গিকভাবেই একজন চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে কিছু উৎকণ্ঠা ও চিন্তাভাবনা আমার মধ্যে অনুভূত হচ্ছে, যা পাঠকদের জন্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

বাংলাদেশে প্রতিবছর সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোয় প্রায় ৯ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হয়, যারা পাঁচ বছরে অধ্যয়ন শেষ করে এবং ইন্টার্নশিপের পর এদের মধ্যে কমপক্ষে ৪-৫ হাজার ডাক্তার দেশের চিকিৎসাসেবার মূলধারায় যুক্ত হয়।

এ বছর যদি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা না হয় কিংবা শিক্ষার্থীরা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে না পারে, তবে চিকিৎসা খাতে বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি হবে, যা পরবর্তী সময়ে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার আয়োজন বা বিকল্প ব্যবস্থায় আয়োজনের ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানাই।

আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই: বিগত ১৫-২০ বছরে বাংলাদেশের চিকিৎসা শিক্ষা বিদেশে বেশ সুনাম অর্জন করেছে। প্রতিবছর পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে প্রচুর ছাত্রছাত্রী বাংলাদেশে পড়তে আসে। এটা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। এতে একদিকে যেমন বিদেশি মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে, অন্যদিকে এসব ছাত্রছাত্রী নিজ দেশে কিংবা বিদেশে গিয়ে সুনামের সঙ্গে কাজ করছে, যার দ্বারা বাংলাদেশের চিকিৎসা শিক্ষার মান সম্পর্কেও সবাই অবহিত হচ্ছে।

যদি এ বছর কোনো কারণে বিদেশি ছাত্রছাত্রী ভর্তি বিঘ্নিত হয়, তাহলে এ খাতটি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা অন্য দেশে ভর্তির চেষ্টা করবে, যা কোনোভাবেই আমাদের কাম্য নয়।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমাদের ভবিষ্য করণীয় সম্পর্কে ভাবতে হবে এবং দ্রুত পরিকল্পনা করতে হবে। যদি আমরা এবারে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা না নিয়ে পরবর্তী ব্যাচ কিংবা বছরের সঙ্গে নেয়ার চিন্তা করি, তবে সেটাও হবে আরেকটি বিপর্যয়। কারণ, দুই ব্যাচের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে এক সেশনে ভর্তি করা বা জায়গা দেয়া সম্ভব হবে না এবং অনেকেই ভর্তি হতে পারবে না।

অতএব আমাদের চিন্তা করতে হবে-কীভাবে ২০২০ সালের মধ্যেই দ্রুত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা সম্পন্ন করে পরবর্তী স্নাতক পর্যায়ে (বিশ্ববিদ্যালয়/মেডিকেল/ইঞ্জিনিয়ারিং) ভর্তির ব্যবস্থা করা যায়। সেইসঙ্গে বিদেশি ছাত্রছাত্রীরাও যাতে প্রতিবছরের মতো মেডিকেল কলেজগুলোয় ভর্তি হতে পারে, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।